বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, হেমন্তকাল
Search
Close this search box.
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, হেমন্তকাল

দেদীপ্যমান কবি ও কবিতা

ফরিদা ইয়াসমিন সুমি

কবিতা ও প্রেম

তোমার হৃদকম্পনের অনুবাদ করতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে অণুগল্প, ছোটগল্প, বড়গল্প হয়ে উপন্যাস হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ করবার পরে নিবিড় বিস্ময়ে লক্ষ্য করি সার্থক কবিতা হয়ে উঠেছে শেষতক! ক্রমশ সেই কবিতার উপমা, উৎপ্রেক্ষা, রূপকের ঘোরে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ছি, এটাকে কী বলবে তুমি?

এটা কি প্রেম নয়?

অবস্তুগত প্রেমে বিশ্বাসী নই বলে কুণ্ডলীর তারগুলো ইনস্যুলেটরহীন। এই যে আমার বস্তুগত প্রেম, এটা কি প্রেম নয়?

প্রেম জানতে হলে ব্যাকরণের বাইরে যাওয়া চাই! নতুন নতুন আবিষ্কারে ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়া চাই শীৎকার-চিৎকারে!

আর কোনো বিহ্বলতা নেই, বিভ্রান্তি নেই, এটাই প্রেম!

মৃতমুখ

আমাদের তবু দেখা হয়ে যায়…
জন্ম-মৃত্যু-বিয়ের মতো চিরন্তন পরিণামে, পরিণতিতে।

স্তবকে সাজাই ফুল, ছবিতে ধরি শিশুমুখ, কনেমুখ, নিষ্প্রাণ মৃতমুখটিও! শিশু কাঁদে, কনে কাঁদে, মৃতমুখ দেখে লোকে কাঁদে। আমরা ধরে রাখি কান্নাপর্বের স্মৃতিগুলো। প্রমাণে সচেষ্ট থাকি, ডালি ধরেছিলাম আমিও। পরিণামের অন্তর্গত গূঢ়বার্তা সাময়িক অনুরণন তোলে নিউরনে! নিজেকে নিয়ে ভাবিত হই। চিন্তাক্লিষ্ট হই। বিয়ে-মজলিশের আড়ম্বরতায় ভাবি, কী এমন সুখ এনে দেয়, ভারসাম্যে ভরা জীবন ছাড়া? শিশুমুখটিও একদিন আর থাকে না, চলে যায় নিতান্তই একা করে দিয়ে! মৃতমুখটি কাতর করে তোলে সবচে’ বেশি। দাঁড় করিয়ে দেয় নির্মম সত্যের মুখে জীবন আর মৃত্যুর ফারাক যে রেশমসুতোর প্রস্থের চেয়েও কম! আমরা তবু সংসারে ফিরি, জীবনে ফিরি, কাঁদি, হাসি, ভালোবাসি জাগতিক ভারসাম্য, ভালোবাসি শিশুমুখ, মৃতের জন্য শোকজ্ঞাপনের আড়ম্বর!

ফরিদা ইয়াসমিন সুমি

————————–

জন্ম : ৪ অক্টোবর, ঢাকায়। বসবাস চট্টগ্রামে।

পেশায় চিকিৎসক। গাইনি, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ।
সহকারী অধ্যাপক (গাইনি ও প্রসূতি বিভাগ), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।
লেখালেখি : কবিতা ও ছোটগল্প
প্রকাশিত কবিতার বই : ১০ টি
ছোটগল্পের বই : ৪ টি
নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক বই : ২ টি।

পৃথা রায় চৌধুরী

অবান্তর কথা

ঘোর বর্ষায় একে একে সামনে এসে দাঁড়ায়
যত চলে যাওয়া রাস্তা
সেখানে বসে মাঘের দিন গোনে যে হরিয়ালি বুক মেয়ে
তার গেঁজেল কবি-প্রেমিক পাড়ি দিয়েছে অপ্সরাদের টানে।

মেয়েটার মাখন খাঁজের থেকেও বেশি সুগন্ধের লোভে
ছেলেটা একা একা ঘুমের ভেতরেই…
পরদিন শানানো লকলকে জিভে অনেকে আউড়ে গেলেন,
আহা! বাছার কবিতা মিস করবো!

বন্ধুরা মনখারাপে কেঁদে আরও দুপাত্তর
আপনি মহাকলমের ঊর্ধ্বে উঠে নির্মীলিত চোখ,
বললেন, এর তো যাবারই ছিলো!

আর মেয়েটার শুকনো হাতে থাকা ডালের বর্ষার বাড়বাড়ন্ত দেখে

অনায়াসে ইশারা করলেন বাজারের দিকে।

কাহন

বসন্ত দিয়ে শুরু হওয়া কোনো ঋতুচক্র
নেমে যায় পাতাঝরা দশমাস্যা ধারায়।

অববাহিকা নামের কিছু কথার টানে
মেঘের বাড়বাড়ন্ত দেখে যাওয়া
অসম্পূর্ণ থেকে যায়
নির্দায় নির্দোষ স্তব্ধ জঙ্গলময়।

হরিণ হরিণ কিছু স্মৃতিকে শিং ভেঙে দিলে
ধূধূ বালি বোকামির ছাপ পুষে রাখে
কার ভরসায়, জানা থাকে না।

ফিরতি পথের বুক ঘষটানি
দেখতে বসার কোনো কসম লেখা থাকে নি
ছেঁড়া পালকের গায়।

পরপর স্ক্রীন পার করে
বাড়ানো হাত, প্রথম কাঁপা স্বর, কষ্ট ট্রান্সফার
ম্যাজিক দুপুর, অর্পাথিব বিকেল, বিরহী সন্ধ্যা।

অনজান নাবিকেরা কানাকানি করে
সন্ধ্যাতারা ফ্যাকাশে লাল….

পৃথা রায় চৌধুরী

——————–

জন্ম : ভারতবর্ষের ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ শহরে।

প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ও পরিবেশ বিজ্ঞানে ডক্টরেট।
নিজের একক কাব্যগ্রন্থ সাতটি– মন্দ মেয়ের সেলফি, জন্মান্তরে সিসিফাস, শব্দ এক পুরুষপাখি, চতুর্থ প্রহরে নক্ষত্রের ছায়া, ঘড়ির তেরো নম্বর কাঁটা, মায়াকীয়া ও মুরাল তন্ত্র।
২০১৬ সালে ‘শব্দের মিছিল’ সাহিত্য গোষ্ঠীর তরফ থেকে ‘আত্মার স্পন্দন’ ১৪২৩ এবং  পরবর্তীতে ‘আমি অনন্যা’র সাহিত্য কৃতী সম্মাননা ২০১৯-২০২০, এবং আরও কিছু পত্রিকার তরফ থেকে সম্মাননাপ্রাপ্ত।

মাহফুজা অনন্যা

স্বপ্ন এ্যানিমেশন

অন্যের পায়ের ছাপ মুছতে বুনছো রাবার গাছ
বুনসেন শিখা নিস্পেস হচ্ছো তুমি, মুছে যাচ্ছে তোমার হস্তরেখা
স্ট্যাম্পে মুছে দিচ্ছো আইল, মোছে কি আকাশের সীমানা ?

উপড়ে দিচ্ছো বাড়ির গেইটে লাগানো কাগজফুলের গাছ
অ্যান্টিক্লক, কালারফুল ওয়ালেট, বসার ঘরে স্বপ্ন এ্যানিমেশন, ওয়াও!

বেরহম অহং হাতরে নদীতে, ভাসছে লিভিং রুম
ডুবছে বারান্দা
পাথরকুচির টবে অহংপাতা অসম্ভব নুনিয়ায় মুখচাড়া দিয়ে উঠছে ছাদবাগান!

শাড়ি নয় সারি সারি বুড়ী দাগ শরীরে
একটু একটু করে বুড়িয়ে যাচ্ছে সাদাপায়ের লক্ষ্মী
তোমার-আমার ঠাকুমা ঝুলি খুঁজতে গিয়ে চিরদিন রূপকথা ভুলেছে!

ভ্রমের জাদুঘর

অন্ধকার অন্ধকার বলে গগল্স পরে চলে গেলো রোদ
আর আমার কবিতারাও অদ্ভুত ভাবে বদলে গেলো!

আমার সামনের চেয়ারটি খালি;
এ্যানসিয়েন্ট ম্যারিনারের সদ্য মৃত কেন্দ্রীয় চরিত্র এ্যালবার্টস পাখিটি এসে মুখোমুখি বসলো

আমাদের কথার ফাঁকে তুমি ফিরে গেলে টট্টর পাখনা মেলা পথে
উদাসীন পথিকের একজোড়া চটি তাকিয়ে থাকে খালি চোখে
দোলনা খালি, দাও দোল, দোল দাও…
দোয়েলগুলো কোথায়?

রোদের ছেলেরাও এখন সুনামগঞ্জের বন্যা মিছিলে
সেতু উপচে ঢেউ-ঢেউ, দেখতে পাও না?

অভাগা যায় তো যায়ই… এইসব ইক্যুয়াল সিন দেখতে দেখতে ক্লান্ত নব্বই দশকের রূপসা-চপ্পল
এনিওয়ে, নদী ছুঁয়ে স্যাঁতসেতে চৌকোণনিতি টোল তুলে সাজায় ভ্রমের জাদুঘর।

মাহফুজা অনন্যা

———————

জন্ম : ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৮২, কুষ্টিয়া। ঢাকায় বসবাস।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ৫টি। সোনালি অসুখ, কামার্ত নগরের কামিজ, এবং নাভির কান্না, আশি দোররা চুম্বন এবং ত্রিভুজ ফুল শনিবার ফোটে। নিয়মিত প্রচুর লেখালেখি করেন জাতীয় দৈনিক, লিটলম্যাগ ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ওয়েবম্যাগে।

সুমিতা মুখোপাধ্যায়

ভাঙ্গা সেঁতু

কিছু কিছু দিন
মানুষের একা থাকার অধিকার হরণ করে নেয়।

মুখর করে তোলে, বাইরে, ভেতরে।
জঠিল শেকড় ছড়িয়ে বৃক্ষ-জীবন, একাকী।

একা
একা

অরণ্য গভীরে ভীষণ
এক অদ্ভুত  একাকী জীবন।

প্রাগৈতিহাসিক পাথরের গায়ে লেপ্টে থাকা শ্যাওলার মতো বুকের
পাঁজরে লেখ হয় শ্রান্তিহীন
হাজারো বেদনার আখ্যান।

বিবাগী বাষ্পের মত উবে যায় দেহগত সুখ,
বড়ই ক্ষণস্থায়ী
জানি, তবু বহতা নদীর কাছে
অনাদরে ঝরতে থাকা শুকনো পাতার ঘূর্ণির কাছে
ঘামে ভেজা বুকের মায়াঘ্রাণের কাছে
মাটির অন্তর্গত প্রেমের কাছে আমার ঋণ।

নদীর বুকে আঁকা পূর্ণিমার চাঁদ রূপালি ঢেউ
তার আপন হয়েছে কি কখনো, অক্ষয় কিছু?
হয়নি জানি, তা হবার নয়।

প্রতিটি জীবিত মানুষই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে বাঁচে নিজস্ব জগতে,
অচেনা আঁধার এক
আনমনা রাতের গল্প লিখে যায় কবোষ্ণ জলে, জানি …

প্রবল র্বষণে বালিভরাক্রান্ত এ মাটি আর শেকড় ভালোবাসা
অবিরাম আলগা হওয়ার গান গেয়ে যায় …

মরণের মতো এক অতলান্ত ঘুমে
তলিয়ে যাবার আগে
একমুঠো আবির রোদ্দুর
সুষুম্নাকাণ্ডের গভীরে

এক অনির্বচনীয় শিহরণ জানিয়ে দেয়
আমার মৃত্যুর দরবেশে
আমি এক পিরামিড।

কবিতা দ্রোহ

আজ তোমায় কবিতার কথা বলতে চেয়েছিলাম,
তখন শিশুর কান্নায় বিধাতাকে  খুঁজে–
চাল ফুটে হলো অন্ন,
আর ডুবোতেলে ভেজে তোলা বাদামী কষ্টগুলো
চকচকে শুভ্র দাঁতে
কেটে খেলো রঙিন দালানের দালাল।
দাঁতের পাড়ে জন্মানো শ্যাওলা খেয়ে
জীবন চলে না এক মুহূর্ত বাঁচার জন্য,
অন্ন চাই বস্ত্র চাই শিক্ষা চাই!
প্রাণের জন্য প্রকৃত জলের বৃক্ষ চাই,
শুদ্ধতার জন্য–
একটি দ্রোহের কবিতা চাই।

সুমিতা মুখোপাধ্যায়

————————

জন্ম : ২০ আগস্ট ১৯৭৫, যাদবপুর, কলকাতা।
শিক্ষা: শান্তি নিকেতন থেকে বাংলায় এমএ। এখন তিনি সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করছেন। নিয়মিত লেখালেখি করছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, লিটলম্যাগাজিন ও ওয়েব ম্যাগাজিনে।

খাদিজা  ইভ

বিপদ সংকেত

ভালোবাসা খুঁজতে গিয়ে, ফিরে আসি– অযাচিত দুঃখ নিয়ে।

গন্তব্য স্টেশনে মহামারি
একটা দুর্বিষহ যন্ত্রণার আবহ

আবহাওয়া অধিদপ্তরে তখন সংবাদের শিরোনাম,
‘রমণীর হৃদয়ে নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত’!

নাবিক পৌঁছায় অন্য কোনো তীরে
নতুন বসতি গড়বে বলে…

 

ডাকবাক্সের দিনলিপি

ডাকবাক্সে আজকাল দুঃখ বিলি করি।

লিপস্টিকের কড়া গন্ধে মাতাল হয়ে
উষ্ণতা খুঁজেছো ক্ষুরধার জিভে
পা ফেলেও ফিরে গেছো পিছুটানে।

আমি ডেকেছি বহুবার, ডেকেছি আমি।

টান

আমি অন্ধকারের প্রেমে পড়ি
একেবারে নিকশ কালো অন্ধকার
যার চাঁদের মতো কলঙ্ক নেই
নেই আলেয়ার মতো হঠাৎ ঝলকে উঠার পাঁয়তারা।

শরতের আকাশে শুভ্র মেঘের প্রতি টান নেই তেমন
তাকে ভেবে যে কয়েকটা দাঁড়কাক উড়ে বেড়ায়
তার আদ্যোপান্ত আমার মুখস্থ
আমি চাই ঝড় উঠুক
বৈরি বাতাসে মাস্তুলে দাঁড়িয়ে থাকা নাবিক জানান দিক অন্ধকার খুব নিকটবর্তী।

খাদিজা ইভ

—————

জন্ম : আড়াইসিধা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
ইডেন কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। আপাতত বেকার মানুষ।

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ‘নিজেকে জ্বালিয়ে কেবল গণকবর রচিত হয়’

এই বিভাগে আরো পড়ুন

কয়েক ফোঁটা স্মৃতির মধু

কবিতা প্রসঙ্গে নানা অনুষঙ্গ খুব স্মৃতিকাতর করে তোলে আজকাল। কনটেক্সট ছাড়া যেমন টেক্সট হয় না, অনুষঙ্গ ছাড়াও প্রসঙ্গ তেমনি গুরুত্ব হারায়। মাঝে মধ্যে ভাবি স্মৃতিই

দেদীপ্যমান কবি ও কবিতা

ফরিদা ইয়াসমিন সুমি কবিতা ও প্রেম তোমার হৃদকম্পনের অনুবাদ করতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে অণুগল্প, ছোটগল্প, বড়গল্প হয়ে উপন্যাস হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ করবার পরে নিবিড় বিস্ময়ে লক্ষ্য

মহাকালের কবি ও কবিতা

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল মায়ের মানিওর্ডার চাঁদও মায়ের মতন আমাদের সাথে সাথে থাকে, জোছনা এবং স্নেহাদর সমান্তরাল। মন্ট্রিয়লে হোটেল ম্যারিয়টে ভিসাকার্ড হারানোর সাথে সাথে পেয়ে যাই

যুদ্ধ শেষ যুদ্ধ আছে

যুদ্ধ কি শেষ? এরূপ প্রশ্নে পাল্টা প্রশ্ন আসবে এ আবার কেমন কথা? কথা যাই হোক, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়াও যায় না! আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, ভৌগলিক